যা ঘটে গেছে তা কি সবার জন্যই অতীত? টাইম ট্রাভেল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
যা ঘটে গেছে তা কি সবার জন্যই অতীত? এই প্রশ্নটি আমাদের প্রায় সকলের জানার আগ্রহ অনেক বেশি। আমরা অনেক সময় অনেকভাবে চিন্তা করি টাইম ট্রাভেল বলে কিছু থাকত তাহলে কতই না ভালো হতো। সাধারণভাবে টাইম ট্রাভেল বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে সময়ের সাথে বর্তমান থেকে বা ভবিষ্যতে যাওয়া যা কোন প্রকার শারীরিক বা বায়োলজিক্যাল পরিবর্তন ছাড়াই।
কিন্তু টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে যদি ভাবতে যায় তাহলে শারীরিক পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মতে সময় একটি ডাইমেনশন। এখন আমাদের পরিচিত ডাইমেনশন অর্থাৎ দৈর্ঘ্য,প্রস্থ,উচ্চতা এগুলো সকল স্থানেই বিরাজ করে এবং আমরা এই ডাইমেনশনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে পারি যেমন রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়া।
ভূমিকা
যা ঘটে গেছে তা কি সবার জন্যই অতীত? এই সম্পর্কে জানার বা বোঝার আগ্রহ অনেক বেশি। আজকের দিনে দাড়িয়ে যদি চিন্তা করা যায় তাহলে অতীতে যাওয়া বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব। টাইম ট্রাভেল সত্যি করা যায় কিনা,বর্তমান থেকে অতীতে যাওয়া যায় কিনা, এই সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কি মতামত, টাইম ট্রাভেল নিয়ে আল-কোরআনে কি বলা হয়েছে, মানুষ কেন ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাই। এসব কিছু নিয়ে আজকের আর্টিকেলসটি লিখা হয়েছে। আশা করি সবাই মন দিয়ে পড়বেন।
সত্যিই কি বর্তমান থেকে অতীতে যাওয়া যায়?
সময় যেহেতু একটি ডাইমেনশন তাই সময় কেউ একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দুতে যাওয়া উচিত। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে সময়ের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে যাওয়া মানে অতীত কিংবা ভবিষ্যতে যাওয়া। সকল ধরনের গবেষণার মাধ্যমে এইটুকু বলা যায় যে বর্তমান থেকে অতীতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু অতীতে যাওয়ার বিষয় নিয়ে অনেক ধরনের চিন্তাভাবনা আমাদের অনেকের মধ্যে রয়েছে। এমনকি বিজ্ঞানীদের মধ্যেও রয়েছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে অসংখ্য মুভিও তৈরি করা হয়েছে। অতীতে যাওয়া নিয়ে যদি আরো গভীরে আলোচনা করা হয় তাহলে বলা যায় বিজ্ঞানী KIP STEPHEN THRNE তিনি মনে করেন ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে অতীতে যাওয়া যায়। ওয়ার্মহোল হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে দুইটি দূরবর্তী স্থানের মুখ দুই পাশে থাকবে এবং তাদের দুইটি বিন্দু অপর বিন্দুর সাথে মিলিত অবস্থায় থাকবে। ফলে স্থানটির মধ্যবর্তী দূরত্বটি কমে আসে।
মানুষ বিভিন্ন ধরনের ধারণা নিয়ে আর্টিফিশিয়ালি ওয়ার্মহোল তৈরি করেছেন। যার একটি মুখ থাকবে পৃথিবীতে অবস্থানরত যে কোন একটি ল্যাবের দিকে এবং অন্য মুখটি থাকবে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলতে পারে এমন একটি মহাকাশ বাহনে। ওয়ার্মহোলের দুই মুখ সবসময় নিজেদের মধ্যে কানেক্ট বজায় রাখবে। এখন যদি দ্রুত গতিতে চলা মহাকাশ বাহনটি আলোর গতির কাছাকাছি বা তার চেয়ে দ্রুত চলে তাহলে বাহনটিতে থাকা মানুষের সময় ধীরে হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ধরা যায় বাহনটিতে থাকা মানুষটির যদি ১০ বছর অতিক্রম হয় তাহলে পৃথিবীতে থাকা মানুষের ৩০ বছর অতিক্রম হবে। ধরি দ্রুত গতিতে থাকা মানুষটির এখন আছে ২০২৪ সালে তাহলে পৃথিবীতে থাকা মানুষটি সময় হবে ২০৫৪ সাল। এখন যদি পৃথিবীতে থাকা মানুষটি ওয়ার্মহোলের মধ্যে দিয়ে ওই মানুষটির কাছে চলে যায় তাহলে সে ২০৫৪ থেকে ২০২৪ সালে চলে যেতে পারবে।
তার মানে সে বর্তমান থেকে অতীতে চলে গেল। কিন্তু এটি প্রায় অসম্ভব। অতীতে যাওয়া যদি সম্ভব হতো তাহলে মানুষ অতীতে যেয়ে ভবিষ্যতে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দিত। এই পরিবর্তনের জন্য অনেক কিছুই ঘটতো না। তাই অনেকের মধ্যে অতীতে যাওয়ার যদি সম্ভব হয় তাও অতীতের কোন ঘটনা আমরা পরিবর্তন করতে পারবো না। কেউ যদি অতীত পরিবর্তন করতে চায় তাহলে সে বারবার ব্যর্থ হবে। আবার অনেকেই মনে করেন কোন মানুষ যদি অতীতে যায় তাহলে সে অতীতে কি উদ্দেশ্যে গেছে সেটা তার মস্তিষ্ক থেকে মুছে যাবে।
টাইম মেশিনের মাধ্যমে অতীত বা ভবিষ্যৎ ভ্রমণ করা কি সম্ভব?
পৃথিবীতে থাকা প্রায় প্রত্যেক মানুষের চাই অতীতে যেয়ে তাদের সকল ভুলগুলোকে শুধরে নিতে এবং শৈশব থেকে নতুন করে জীবন শুরু করতে। আবার অনেকেই ভবিষ্যতে তাদের সাথে কি ঘটতে যাচ্ছে বা তারা তাদের জীবনে কি অর্জন করতে পেরেছে সেটা দেখা বা জানার প্রবল আগ্রহ থাকে। বাংলাতে একটি প্রবাদ প্রচলন রয়েছে “সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না’’ অর্থাৎ যে সময় চলে গেছে সেটা কখনো ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। মানুষ সব সময় বর্তমানে অবস্থান করে। অনেকেই টাইম ট্রাভেল করে অতীতে কিংবা ভবিষ্যতে ভ্রমণ করেছেন বলে অনেকেরই ধারণা। যার একটি বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে ২০০৩ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ৪৪ বছর বয়সের অ্যান্ডরু কার্লসিন একজনকে গ্রেপ্তার করেন।
কারণ তিনি কয়েকদিনের মধ্যে ৮০০ ডলার ইনভেস্ট করে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের মালিক হয়ে যান। তাকে গ্রেফতার করার পরে এক অদ্ভুত ধরনের রহস্যের উদ্ভাবন হয়। গোয়েন্দা সংস্থার দাবি তিনি ছিলেন একজন টাইম ট্রাভেলার। যিনি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছেন তাই সে অতীতে শেয়ার বাজারের সমস্ত কিছু আগে থেকেই জানেন। এটার উপর ভিত্তি করে তারা তদন্ত শুরু করে কিন্তু অ্যান্ডরু কার্লসিনের ২০০২ সালের আগের কোন তথ্য তারা খুঁজে পাননি এবং সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো ২০০৩ সালে যখন তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন হঠাৎ করে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। তারপর থেকে তার কোন ধরনের খোঁজ আর কখনো পাওয়া যায়নি তাকে আর কোনদিন কেউ দেখেনি। তাই মানুষের ধারণা ভবিষ্যৎ থেকে সত্যি অতীতে ফিরে আসা সম্ভব।
বিজ্ঞানীদের মতে ঘটে যাওয়া সব কিছুই কি অতীত?
অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের মতে মহাবিশ্বের সব স্থানে সময় প্রবাহের হার সমান। অর্থাৎ পৃথিবীতে এক ঘন্টা অতিক্রম হওয়া মানে মহাবিশ্বের সব স্থানে এক ঘন্টা অতিক্রম হওয়া। যা ঘটে গেছে তা সবার জন্যই অতীত। কিন্তু আইজ্যাক নিউটন এটির মতবিরোধ করেন। আইজ্যাক নিউটনের মতে মহাবিশ্বের সব স্থানের সময় প্রবাহের হার এক না, যা ঘটে গেছে তা সবার জন্য অতীত নাও হতে পারে। এই সম্পর্কের তার The Theory Of Reality বইটি বা আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রকাশের পর সময় সম্পর্কে সবার ধারণার পরিবর্তন ঘটে। আইনস্টাইনের মতে কোন স্থানের এক ঘন্টা অতিক্রম করা মানে অন্য স্থানের এক বছরের অতিক্রম হতে পারে।
টাইম ট্রাভেল সত্যিই কি করা সম্ভব?
আজকের ধারণা অনুযায়ী বলা যায় যে কেউ যদি আলোর গতির চাইতেও দ্রুত ভ্রমণ করতে পারে তাহলে তার পক্ষে ট্রাইম ট্রাভেল করা সম্ভব। অর্থাৎ কেউ যদি দ্রুতগতি সম্পন্ন কোন বাহনে করে মহাকাশ ভ্রমণে বের হয় এবং ভ্রমণ শেষে তিনি পৃথিবীতে ফিরে দেখতে পাবে অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। তবে লোকটির কাছে সেটি অল্প সময় মনে হবে এবং তিনি পৃথিবীতে এসে সব কিছুর অনেক বেশি পরিবর্তন দেখতে পাবে যেমন ধরেন তার কোন ভাই যার বয়স ছিল ২০ বছর এবং তার বয়স ছিল ২৩।
তিনি পৃথিবীতে এসে দেখবেন তার ভাইয়ের বয়স ৫০ বছর এবং তার বয়স ৩৩ বছর। এর অর্থ হচ্ছে মহাকাশ ভ্রমণের সময় তার গতিবেগ Slow হয়ে গেছে ফলে তার শারীরিক পরিবর্তন ও Slow হয়ে যাবে। তাই সহজ ভাবে বলতে গেলে টাইম ট্রাভেল আজকের দিনে বৈজ্ঞানিকভাবে সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এত দ্রুত গতি সম্পন্ন মহাকাশ যানের কোন উপস্থিতি পৃথিবীতে নেই যেটি আলোর গতির চাইতে দ্রুত অতিক্রম করতে পারে। আলোর গতির কাছে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় তিন লক্ষ পথ অতিক্রম করতে পারে। যেটা মানুষের দ্বারা এখন পর্যন্ত করা সম্ভব নয়।
টাইম ট্রাভেল নিয়ে আল-কোরআনে কি কোন ধারনা দেওয়া আছে?
অনেকে মনে করে টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে ইসলামের কোন ব্যাখ্যা দেওয়া নেই বা কোরআনের কোন ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কোরআনে সূরা আল-মাআরিজ ৪র্থ নাম্বার আয়াতে বলেছেন “ফেরেশতাগণ এবং রুহু আল্লাহর দিকে আরোহন করে এমন একদিনে, যার পরিমাণ(তোমাদের হিসাব মতে) ৫০ হাজার বছর। যেই থিওরি পুরো পৃথিবীর বিজ্ঞানী কে পরিবর্তন করে দিয়েছে সে থিওরি আজ থেকে প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্বে মহান আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবীর মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। ফেরেশতা যেহেতু নূর অর্থাৎ আলোর তৈরি তাই তাদের গতিবেগ আলোর গতিবেগ এর চেয়েও বেশি। তাই ফেরেশতাগণের একদিনের আরোহণ সমান মানুষের ৫০ বছর আরোহণের সমান। এ থেকে বুঝা যায় টাইম ট্রাভেল করার সত্যিই সম্ভব।
মানুষ কেন ভবিষ্যতে যেতে চায়?
ভবিষ্যৎ জানতে চাওয়া নিয়ে মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি। মানুষ অতীতে কি ঘটেছে সেটার বিষয়ে অবগত থাকে, বর্তমানে কি ঘটছে সেটিও তার জানার মধ্যে। কিন্তু মানুষ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন কিছু আগে থেকে জানতে বা বুঝতে পারেনা। শুধুমাত্র ধারণা করতে পারে যে বর্তমানের ওপর নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ টা আসলে কেমন হবে। এজন্য মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। যদি মানুষ টাইম মেশিনের মাধ্যমে বা এমন কোন যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারে যার মাধ্যমে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব হয় তাহলে মানুষ ভবিষ্যতে যেয়ে কি কি অর্জন করতে পেরেছে তার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সবকিছু অর্জন হয়েছে কিনা সেটা জানতে পারবে।আর যেসকল জিনিস তার পাওয়ার কথা ছিল সেগুলো পেয়েছে কিনা সেটি ও সে জানতে পারবে। ভবিষ্যৎ জানার ফলে সে বর্তমানে এসে তার ভুল গুলোকে সংশোধন করেই এগুবে যেন তার ভবিষ্যতে পুরোপুরি প্রাপ্তি অর্জন হয়। ভবিষ্যৎ সুন্দর করার জন্য মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানার এত আগ্রহ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url