প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা করে কেন?
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা করে এমন সমস্যা অনেকেরই হয়। এই সমস্যা সাধারণত ঘুমের ঘাটতির কারণেই হয়। প্রতিদিন রাতে যদি সঠিক সময় ঘুম না হয় এবং সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়। তাহলে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর মাথা ব্যথা করে। এই ব্যথা অনেক সময় সারাদিন থাকে আবার অনেক সময় খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
অনেকেরই ধারণা এটি কোন রোগ আবার অনেকেই মনে করে এটি একটি সাধারণ বিষয়। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা করে কেন এবং এর থেকে বাঁচার উপায় জানতে আমাদের আর্টিকেলস টা সম্পূর্ণ পড়ুন।
ভূমিকা
মাথাব্যথা আমাদের প্রায় নিত্যদিনের একটি সমস্য। অনেকেরই প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা করে। সাধারণত ঘুম কম হলে মাথা ব্যথা করে। এছাড়া অনেক কারণে মাথা ব্যথা হয়। মাথা ব্যথা কেন হয় এবং মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ। কখন মাথা ব্যথা করলে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, মাথার পিছনে ব্যথার কারণ, কত বছর বয়সে মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে এবং মাথা ব্যথা হলে কি ওষুধ খেতে হবে। এই সকল কিছু নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা হলো। আশা করি আর্টিকেলস পরে আপনারা সম্পূর্ণভাবে উপকৃত হবেন।
মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ
বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে মাথাব্যথা হয়। অনেকেরই মাইগ্রেনের সমস্যার কারণে মাথাব্যথা হয় আবার অনেকেরই চোখের সমস্যার কারণে মাথাব্যথা হয়। তাই মাথাব্যথা কে আমরা নিত্যদিনের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ভেবে থাকি।কিন্তু কিছু মাথাব্যথা অনেক জটিল রোগের উপসর্গ। যা ভবিষ্যতে মারাত্মক বিপদের কারণও হতে পারে।
মাথা ব্যথাকে International headache society দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ-
1. primary headache
2.secondary headache
1. primary headache বিশেষজ্ঞদের মতে সকল ধরনের মাথা ব্যথার প্রায় ৯০ ভাগই primary মাথা ব্যথা। এটি কোন জটিল সমস্যা নয় এবং এটি বারবার হয়। আজ পর্যন্ত এই মাথা ব্যথার আসল কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
2.secondary headache মাথা বা ঘাড়ের কোন সমস্যা হলে এই মাথাব্যথার সৃষ্টি হয়। যেমন-
সংক্রমণ(infection), মাথায় আঘাত পেলে( head injury), মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বা মস্তিষ্কে টিউমার ইত্যাদি।
কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ দেখে আমরা secondary মাথা ব্যথার কারণ গুলো ধারনা করতে পারি। এই উপসর্গ গুলোকে Red flags বলে, যেমন-
- হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা।
- ৫০ বছরের পর নতুন করে মাথাব্যথা করা।
- জ্বর, rash ও ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া।
- হাঁচি ও কাশিতে মাথা ব্যথা করা।
- হাত বা পা অচল হওয়া।
- মাথায় আঘাতের পর তীব্র ব্যথা করা।
ঘন ঘন মাথা ব্যাথার কারণ কি
ঘন ঘন মাথা ব্যাথার কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত চিন্তা। অতিরিক্ত চিন্তার কারণে মানুষের ঘন ঘন মাথা ব্যথা হয় । অতিরিক্ত চিন্তার কারণে সাধারণত মাথার কপাল ব্যাথা করে। এই মাথাব্যথা ৩০ মিনিট থেকে ৭ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। অতিরিক্ত চিন্তার কারণে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা করে। যা পরবর্তীতে স্ট্রোক ঘটাতে পারে।
কখন বুঝবেন মাথা ব্যথা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
মাথা ব্যথা নাই এমন মানুষ খুব কমই চোখে পড়ে। অনেকেরই মাথা ব্যথার ধরন অনেক রকম। অনেকেরই প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা করে সে ব্যথা সারাদিন থাকে। মাথা ব্যথা অনেক সাধারন সমস্যা ভাবলেও অনেক সময় মাথাব্যথা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখে বুঝা যায় যে কোন মাথা ব্যথাটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন -
- মাথায় আঘাত পাওয়ার পর মাথা ব্যথা করা।
- কিছুক্ষণ পর পর তীক্ষ্ণ মাথাব্যথা।
- মাথাব্যথার সময় বমি বমি ভাব হওয়া।
- আলো বা শব্দে স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি হওয়া।
- কপাল ও চোখের চারপাশ জুড়ে চাপ ধরে থাকা।
মাথার পিছনে ব্যথা মানে কি স্ট্রোক?
অতিরিক্ত টেনশন, স্ট্রেস, অবসাদ, ঘুমের অভাব এবং অপর্যাপ্ত পানি খাওয়ার জন্য মাথাব্যথা হয়। এর কারণে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা করে। ঘন ঘন মাথা ব্যাথার কারণ আমরা খুঁজে পাইনা। অনেকেই মাথার ব্যথাকে স্ট্রোকের কারণ বলে মনে করে যা অনেকটাই গ্রহনযোগ্য বাক্য। মাথা ব্যথার কারণে স্ট্রোক হতে পারে। মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলেই স্টক হয়। স্টক এর আগে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন-
- অতিরিক্ত মাথা ব্যথা করা।
- ঘাড়ে ও হাতে ব্যথা করা।
- হাঁটাচলা করতে যেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়া।
- শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
- চোখের সমস্যা ও চোখে দেখতে না পাওয়া।
- মাথা ঘোরা ও কোন কিছু বুঝতে না পারা।
- হাত পায়ের মধ্যে কোন কোঅর্ডিনেশন না থাকা।
- মুখের এক দিক বেঁকে যাওয়া ইত্যাদি।
এ সকল সমস্যা দেখা দিলে বুঝে নিতে হবে যে স্ট্রোক ঘটতে পারে। তাই এই সকল সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
১৪ বছর বয়সে কি মাইগ্রেন হতে পারে?
মাইগ্রেন একটি স্বাস্থের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। মাইগ্রেনের সমস্যা সাধারণত ২০-৩০ বছর বয়স থেকে শুরু হয়। কিন্তু সাধারণত ১০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত বয়সকালে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের দেশে প্রতি পাঁচ জন নারীর মধ্যে একজন নারী এই সমস্যায় ভুগে এবং প্রতি পনের জন পুরুষের মধ্যে একজন এই সমস্যায় ভুগে। তাই বুঝা যাচ্ছে পুরুষের তুলনায় মেয়েরা এই সমস্যায় বেশি ভুগে। দশ বছরের পর থেকে যেকোনো সময়েই মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে।
মাথা ব্যাথার জন্য কি ঔষধ খেতে হবে?
মাথা ব্যথা হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকে। তাই কারণ অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করে পৃথিবীতে প্রায় ২০০ টার ও বেশি মাথাব্যথার ধরন রয়েছে। তাই মাথা ব্যাথা ভালো করার জন্য মাথা ব্যথার ওষুধের নাম জানা জরুরী। নিচে সংক্ষেপে মাথা ব্যথা কমানোর ১০ টি ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলো।
নং ঔষধের নাম দাম
১ Anilic ( এনিলিক) 200 mg ৮ টাকা
২ Arain (আরিন) 200 mg ১০ টাকা
৩ Lograin (লজরিন) Tablet 200 mg ১০ টাকা
৪ Migratol (মিগ্রাটল) Tablet 200 mg ১০ টাকা
৫ Migrex (মিগরেক্স) Tablet 200 mg ১০ টাকা
৬ Minopa (মিনোপা) Tablet 200 mg ৭.৩৯ টাকা
৭ Tufnil (টাফনিল) Tablet 200 mg ১০ টাকা
৮ Tolmic (টলমিক) 200 mg ৮.০৩ টাকা
৯ Tolfi (টলিফ) Tablet 200 mg ৯.৫০ টাকা
১০ Namitol (নামিটোল) Tablet 200 mg ১০ টাকা
লেখকের মন্তব্য
মাথাব্যথা কি আমরা অনেক সাধারণ সমস্যা ভাবলেও এটি মোটেও সাধারণ কোনো সমস্যা নয়। মাথাব্যথা একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। যার সঠিক সময়ের চিকিৎসা না হলে অনেক বিপদজনক রূপ ধারণ করতে পারে। তাই মাথা ব্যথা কে অবহেলা না করে অল্প মাথা ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url